bbc.com/bengali নিম্নোক্ত সংবাদটি প্রকাশ করেছে। সংবাদটির নিচে Source Link দেওয়া আছে। আপনি চাইলে Link এ প্রবেশ করে মূল প্রকাশনা থেকে সংবাদটি পরতে পারেন।
জাপানে ধর্ষণের সংজ্ঞা বদল করে এবং যৌন মিলনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স বাড়িয়ে যৌন অপরাধ সংক্রান্ত আইনে বিরাট পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগে জাপানে কেবল ‘জোর করে যৌনমিলন’কেই ধর্ষণ বলে গণ্য করা হতো। এখন সংজ্ঞা পাল্টে বলা হয়েছে ‘সম্মতিবিহীন যৌনমিলন’ ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। এর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের আইনের সঙ্গে জাপানে যৌন অপরাধ সংক্রান্ত আইন-কানুনের সামঞ্জস্য আনা হলো।
অন্যদিকে যৌনমিলনের ক্ষেত্রে সম্মতির বয়স ১৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ১৬ বছর করা হয়েছে।
সমালোচকরা বলেছিলেন, জাপানে কাউকে যৌন মিলনে বাধ্য করা হলে আগের আইনে কোন সুরক্ষা ছিল না, ফলে অনেক যৌন হামলার ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করা যেত না। এছাড়া আদালতে এরকম মামলার রায়ে অনেক অসঙ্গতি থাকতো।
জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চ-কক্ষে শুক্রবার নতুন আইন পাশ হয়।
নতুন আইনে বেশ সুস্পষ্টভাবে এমন আটটি পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ভিক্টিমের পক্ষে ‘যৌন মিলনে অসম্মতি জানানো বা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং তা প্রকাশ করা” বেশ কঠিন।
এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আছে: মদ বা মাদকের প্রভাবে ভিক্টিম নেশাগ্রস্ত, সহিংসতা বা হুমকির মুখে, অথবা “ভীত-সন্ত্রস্ত এবং বিস্মিত।” অন্য একটি পরিস্থিতির কথাও এতে বলা হয়েছে যেখানে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করা হচ্ছে এবং ‘অসম্মতি জানালে তার পরিণতি কী হবে’ সেটি নিয়ে ভিক্টিম চিন্তিত।
জাপানে ১৯০৭ সালে যৌন সম্মতির আইন পাশ করার পর এই প্রথম সেই আইনে কোন পরিবর্তন আনা হলো।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এতদিন পর্যন্ত জাপানেই যৌন মিলনে সম্মতির বয়স সবচেয়ে কম ছিল। তবে জাপানে ১৩ হতে ১৫ বছর বয়সী কারও সঙ্গে যদি কেউ যৌন মিলন করে, তাকে কেবল তখনই সাজা পেতে হবে – যদি তার বয়স ভিক্টিমের চেয়ে পাঁচ বছর বা তার বেশি হয়।
অন্যদিকে জাপানে ধর্ষণের অভিযোগ আনার সময়সীমাও ১০ বছর থেকে ১৫ বছর করা হয়েছে, তাকে ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে আরও বেশি সময় পান।
নতুন আইনে যৌন উদ্দেশ্যে ‘গোপনে ছবি তোলাও’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অসতর্ক মূহুর্তে বা বিনা অনুমতিতে মেয়েদের অসংলগ্ন কাপড়ের নিচ দিয়ে ছবি তোলা কিংবা কোন যৌন কাজের ছবি তোলা এর মধ্যে পড়বে।
জাপানে ২০১৯ সালে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তরা রেহাই পেয়ে যাওয়ার পর যে আন্দোলন শুরু হয়, তারপর আইনে এসব সংস্কার আনা হলো। ২০১৯ সালে এ নিয়ে দেশজুড়ে ‘ফুল হাতে বিক্ষোভ’ শুরু হয়েছিল।
আইনের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ন্যায় বিচার চেয়ে এবং যৌন অপরাধের শিকারদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এসব বিক্ষোভে অংশ নেন।
তবে কয়েকজন আন্দোলনকারী বিবিসিকে বলেছেন, এসব আইনি সংস্কারের ফলে পুরো সমস্যার একটি অংশের মোকাবেলা করা যাবে মাত্র।
টোকিও ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস নাউ’ এর কাজুসো ইটো বলেন, সেক্স এবং এর জন্য সম্মতির বিষয়ে বহু প্রজন্ম ধরে জাপানে যে বিকৃত ধারণার প্রচলন ঘটেছে, সেগুলোরও মোকাবেলা করতে হবে।
জাপানে যৌন অপরাধের শিকার হয়ে যখন কেউ প্রকাশ্যে এনিয়ে মুখ খোলেন, তখন তাদের প্রায়শই হুমকি বা অনলাইনে নোংরা মন্তব্যের শিকার হতে হয়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, আইনের সংস্কারের পরও যৌন অপরাধের শিকার ব্যক্তিরা যেন এ নিয়ে অভিযোগ করতে এগিয়ে আসেন, সেজন্যে তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
জাপানে এধরনের অপরাধের শিকার হওয়ার পরও অনেকে অভিযোগ করতে অনাগ্রহী থাকেন, কারণ জাপানি সমাজে বিষয়টি লজ্জার এবং কলঙ্কের ঘটনা বলে মনে করা হয়।
২০২১ সালে জাপান সরকারের পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ছয় শতাংশ নারী বা পুরুষ এরকম ঘটনার শিকার হওয়ার পর অভিযোগ করেছেন।
জরিপে অংশ নেয়া অর্ধেক নারী বলেছেন, ‘বিব্রতকর’ বলে তারা এ নিয়ে অভিযোগ করতে চাননি।
মিজ ইটো বলছেন, “সমাজে গেড়ে বসা এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে দেশজুড়ে মানুষকে সচেতন এবং শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। যৌন সহিংসতার অপরাধ করে কেউ যেন পার পেয়ে না যায় সেটি নিশ্চিত করার এটাই একমাত্র উপায়।”
একজন মানবাধিকার আইনজীবী সাকুরা কামিতানি বলেন, যৌন অপরাধের শিকার যারা, জাপানের উচিত তাদের আরও বেশি মানসিক এবং আর্থিক সাহায্য দেয়া। আর অপরাধীরাও যেন আবার দ্বিতীয়বার একই কাজ না করে সেজন্যে তাদেরকেও সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।