নরসিংদীর রায়পুরায় পুরনো বিরোধের জের ধরে একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। আগুনে একই পরিবারের তিন শিশুসহ চারজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার ভোররাতে উপজেলার লোচনপুরে এই ঘটনা ঘটে। অগ্নিদগ্ধদের প্রথমে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
অগ্নিদগ্ধরা হলো উপজেলার লোচনপুর গ্রামের সামসুল মিয়ার মেয়ে প্রীতি (১১), সুইটি (১৩), মুক্তামণি (১৬) এবং তাদের ফুফু আবদুল খালেকের স্ত্রী খাতুন নেছা (৬৫)।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি লোচনপুরের দুলাল মিয়া হত্যাকাণ্ডের পর সামসুল মিয়ার দুই ছেলে সোহাগ ও বিপ্লব মিয়াকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে সামসুল মিয়ার পরিবার গা-ঢাকা দিয়ে ছিল। আদালত থেকে কিছুদিন আগে বিপ্লব জামিনে মুক্তি পায়। এরপর গতকাল সোমবার নিজ বাড়িতে আসেন বিপ্লব মিয়ার পরিবারের সদস্যরা। আসার পরপরই ভোর রাতে নিজ বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয় বিপ্লব মিয়ার তিন বোন ও ফুফু। তবে কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো সে সম্পর্কে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলছেন, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে আগুন লাগানো হয়েছে বলে তারা সন্দেহ করছেন। হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিরোধের জেরে এই অগ্নিসংযোগ করা হয়ে থাকতে পারে।
আহত তিন শিশুর বড় বোন রত্না আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবেশী শিপন, কাজলদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে জায়গা-জমি নিয়ে আমাদের বিরোধ চলছিল। তারা অনেকদিন আগে রায়পুরায় মার্ডার মামলার মিথ্যা আসামি করে আমার দুই ভাই সোহাগ ও বিপ্লবকে। ভাইয়েরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গত ডিসেম্বরে আমার বাবা শামছুল হক মারা যান। এরপর থেকে তারা (প্রতিবেশীরা) আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আজ ভোরে সবাই বাসায় ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন পাশের বাড়ির শিপন, কাজল, রবিন, লোকমানসহ কয়েকজন আমাদের ঘরে বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়।’
প্রতিবেশী রমিজ উদ্দিন জানান, ‘ভোরে কান্নাকাটির শব্দ শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরে আগুন লেগেছে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে কিছুই জানি না।’
লোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কখন ঘটেছে জানি না। তবে ধারণা করছি হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব পাল্টা মামলার করার জন্য এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।’
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মেডিক্যাল অফিসার ডা. এনায়েত কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রায়পুরা থেকে চারজন দগ্ধ রোগী এসেছে। এদের সবার দুই হাতসহ মুখ পুড়েছে এবং শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এর মধ্যে খাতুন নেছার ১২ শতাংশ, প্রীতির ১৫ শতাংশ, মুক্তামণির ১০ শতাংশ, সুইটির ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিনুল কবির জানান, ‘গতকালের বিষয়টি অগ্নিকাণ্ড নাকি পেট্রোল বোমা সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তবে আহতদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। মূলত বিপ্লব মিয়া ডাকাত হিসেবেই পরিচিত। একাধিক মামলার আসামি সে। অগ্নিদগ্ধের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’