মানুষ যেন সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের মতো ঘৃণ্য কাজে জড়িত না হয়: প্রধানমন্ত্রী
সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কোনও দেশ ও ধর্ম নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি জঙ্গিই; সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। যারা সন্ত্রাসী-জঙ্গি তাদের কোনও ধর্ম নেই। কোনও দেশ-কাল-পাত্র নেই।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কখনও মানুষের জন্য কোনও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর প্রতি আহ্বান থাকবে এ ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে সকলে যেন দূরে থাকে। এ ধরনের ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে কোনও মানুষ যেন জড়িত না হয়। আমরা চাই না এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা পৃথিবীর কোথাও ঘটুক।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দিতে যাওয়ার আগেই শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে কথা বলেন।
শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী নিহতের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রীলঙ্কায় তিনটি হোটেল ও তিনটি গির্জায় সিরিজ বোমা হামলা এবং পরবর্তীতে আরও দুটি জায়গায় বোমা হামলা হয়। সেখানে এ পর্যন্ত ৪০ জন শিশুসহ ৩২৭ জনের মতো মানুষ মারা গেছে। আরও মৃত্যুর খবর আসছে। অনেকে আহত অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই ঘটনায় আমাদের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিমের সেলিমের কন্যা সোনিয়ার বড় ছেলে জায়ান চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেছে। সোনিয়ার স্বামী আহত অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
জায়ানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, জায়ান চৌধুরী একটি ছোট বাচ্চা। মাত্র ৮ বছর বয়স। আজকে সে আমাদের মাঝে নেই। তার বাবাও মৃত্যুশয্যায়। তাকে এখনো জানতে দেওয়া হয়নি যে জায়ান নেই। সে বার বার খুঁজছে। তার মা বা পরিবারের অবস্থা আপনারা বুঝতেই পারেন। এই ঘটনায় যারা মারা গেছে এবং সংসদে যাদের শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে তাদের সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
এ ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বোমা হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এই ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তারা এর মধ্য থেকে কী অর্জন করছে জানি না। কিন্তু এই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু, কোনও অপরাধ যাদের নেই তারা কেন এভাবে জীবন দেবে। ঠিক এর কিছুদিন পূর্বে নিউজিল্যান্ডে মসজিদে সরাসরি গুলি করে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অনেকগুলো মানুষকে হত্যা করা হলো। আমাদের ক্রিকেটাররা সেখানে ছিল। খুব অল্পের জন্য তারা বেঁচে গেছে। আবার মনুষ্য সৃষ্ট সন্ত্রাসও আমরা দেখি। সেই নুসরাত, যে একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল তাকে তার সঙ্গে যারা সাথী তারা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারলো। এই ধরনের যে অমানবিক ঘটনাগুলি ঘটে, এটা সত্যি মানব জাতির জন্য অকল্যাণকর।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্মের নামে যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস করে তারা আমাদের এই পবিত্র ধর্মের পবিত্রতাকে সকল মানবজাতির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে দিচ্ছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ- সব ধর্মে কিন্তু শান্তির কথা বলা আছে। তারপরেও কিছু লোক ধর্মীয় উন্মাদনায় মানুষের প্রতি আঘাত হানে। মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। এটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও কষ্টকর।
তিনি বলেন, আমাদের দেশেও এ ধরনের বোমা হামলা, জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমরা তা কঠোর হস্তে দমন করেছি। দেশবাসীকে বলবো, সতর্ক থেকে কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা পেলে সঙ্গে সঙ্গে যেন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানায়। আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীর কোথাও ঘটুক।