ওয়েটলিফ্টিং মানেই বডি বিল্ডিং এমনটা এখন আর ভাবা হয় না। ফলে যাঁরা ওয়েটলিফ্টিং করে বডিবিল্ডার হন, তাঁদের প্রতি স্পেশাল অ্যাটেনশন দেওয়ার দিন শেষ। কারণ ওয়েটলিফ্টিংয়ের কিছু সুফল জানতে পারলে আপনিও আজ থেকেই শুরু করবেন প্রতিদিনের এই কাজটি। রোজ সকালে দৌড়ান, বা হাঁটুন, ওয়েটলিফ্টিংয়ের থেকে ভালো কিছু নেই। বিভিন্ন দেশের হেল্থ অ্যান্ড ফিটনেস এক্সপার্ট এই বিষয়ে আজ একমত।
১। হাড়ের সমস্যা ভ্যানিশ বয়স চল্লিশ পেরোলেই আমাদের শরীরে নানারকম রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। তার মধ্যে হাড়ের সমস্যায় আপনি অতিষ্ঠ। এর থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ওয়েটলিফ্টিং। বয়স হলে হাড়ের অষ্টিওপোরেসিস এক অতিপরিচিত রোগ। তাই এর থেকে মুক্তি পেতে কম বয়স থেকেই শুরু করুন ওয়েটলিফ্টিং। এর ফলে আপনার হাড় হবে শক্ত। বয়সের ভারে এই রোগগুলো সহজেই এড়াতে পারবেন। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন আগেভাগে।
২। পেশি গঠন ওয়েটলিফ্টিং পেশি গঠনের সবচেয়ে ভালো উপায়। তবে এই পেশি লোক দেখাতে নয়, আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে ঠিক করে কাজ করতে সাহায্য করতে লাগে। নিয়মিত ওয়েটলিফ্টিং এর ফলে সহজে হাত পা বা অন্যান্য অঙ্গ ব্যাথা হয় না। এতে আপনার কর্মক্ষমতাও বাড়ে।
৩। ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি এই সমস্যা এখন মহামারির মত ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কোনও বাড়ি নেই, যাঁর কোনও একজন সদস্যের ডায়াবেটিস নেই। ডায়াবেটিসের জন্য রোজের তালিকা থেকে বাদও গেছে অনেককিছু। ওয়েটলিফ্টিং কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাকে মুক্তির উপায় দেবে। নিয়ম করে প্রতিদিন যদি ওয়েট লিফ্ট করেন, তবে আপনার রক্তের ইনসুলিন মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও সহজে ওঠানামাও করবে না।
৪। হৃদরোগ থেকে মুক্তি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ওয়েটলিফ্টিং হৃদরোগের প্রবণতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। যাঁরা নিয়মিত ওয়েটলিফ্টিং করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের সম্ভাবনা সত্তর শতাংশ থেকে কমে চল্লিশ শতাংশ হয়ে গেছে। নিয়মিত ওয়েটলিফ্টিং করলে হৃদপিন্ডের কার্ডিওভাসকুলার পেশিগুলো শক্ত হয়, এদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বয়সের ভারেও পেশিগুলো সহজে কাজে ফাঁকি দেয় না। আপনার হৃদপিন্ড সুস্থ থাকে অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত।
৫। চর্বি কমান খাওয়াদাওয়ার অনিয়মে ফ্যাট বাড়ছে শরীরে। আর বাঙালি হলে তো কথাই নেই। ভুঁড়ি বাঙালির এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু অত্যাধিক ফ্যাটের ফলে শরীরের বিভিন্ন শিরা উপশিরা ও হৃদপিন্ডে কোলেষ্টেরল জমতে থাকে যা যে কোনও ধরনের মারণরোগ ডেকে নিয়ে আসে। ফ্যাট কমানো তাই জরুরি। রোজ নিজের ইচ্ছে মত ফ্যাটজাতীয় খাবার খেয়েও শরীরের ফ্যাট কমানো যায় বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ফ্যাট কমাতে অনেকে হাঁটেন বা জগিং করে থাকেন, কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো ও মোক্ষম ওষুধ সেই ওয়েটলিফ্টিং। ওয়েটলিফ্টিং নিয়মিত করলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরে যাবে মাত্র কয়েকদিনেই। শুধু তাই নয়, ওয়েটলিফ্টিং এর উপকারিতা হল আপনি ওয়েটলিফ্টিং করার পর এমনিই বসে থাকলেও আপনার শরীরে ফ্যাট বার্নিং চলতে থাকবে। এটা কিন্তু হাঁটা বা দৌড়ানোর ক্ষেত্রে হয় না।
৬। ডিপ্রেসন কমান ডিপ্রেসনে ভুগছেন বা কোনও কারণে মনখরাপ। ওয়েটলিফ্টিং এইসব কিছুর থেকেই আপনাকে মুক্তি দেবে। আধঘন্টা নিয়ম করে ওয়েটলিফ্টিং করলে দেখবেন নিজেকে খুব চাঙ্গা লাগছে, দূর হয়ে গেছে মনখারাপও। এমনকী আপনি নতুন উদ্যমে পুরোনো জিনিস ভুলে শুরু করতে পারবেন আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো।
ওয়েটলিফ্টিং কম বয়স থেকেই যদি নিয়মিত করা যায় তবে আপনার মন ও শরীর দুইই ভালো থাকবে। দূরে থাকবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে আসতে চাওয়া রোগগুলো, যৌবন হবে দীর্ঘস্থায়ী, আর আয়ুও সাধারণের তুলনায় বেশি হবে। তাই একগন্ডা ওষুধের বদলে শুরু করুন ওয়েটলিফ্টিং, বেছে নিন এক নতুনরকম জীবন।